AnondoBd

Wednesday 23 January 2013

ব্রহ্মপুত্রে নাব্য সংকট তীব্র
 
   
 ব্রহ্মপুত্র নদে অস্বাভাবিক হারে পানি কমে যাওয়ার কারণে নদের নাব্যতা সংকট তীব্র রূপ নিয়েছে। সেই সাথে নদের বুক চিরে জেগে উঠেছে অসংখ্য চর-ডুবোচর। পানির স্বাভাবিক গতি প্রবাহ না থাকায় যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী নৌকা চলাচল মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী নৌকা চলাচল করতে গিয়ে নদের মাঝপথে আটকে যাচ্ছে। ফলে রৌমারী ও রাজীবপুর থেকে চিলমারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা নৌরুট হুমকির মুখে পড়েছে। যে কোনো সময় নৌপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশংকা করা হচ্ছে।
 
নৌকার মাঝি ও মালিকরা জানান, নদীর পানির প্রবাহ সচল রাখতে বেশ কিছু স্থানে ড্রেজিং করা প্রয়োজন। ড্রেজিং করা না হলে যে কোনো মুহূর্তে নৌপথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। রৌমারী ও রাজীবপুর থেকে চিলমারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা নৌ যোগাযোগ বন্ধ হলে এলাকায় জ্বালানি তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের দাম বেড়ে যাবে। যার কারণে অর্থনৈতিক প্রভাব পড়বে।
 
সরেজমিনে ব্রহ্মপুত্র নদে গিয়ে দেখা গেছে, নদের চারপাশে অসংখ্য বালিচর ও ডুবোচর জেগে উঠেছে। যে দিকে চোখ যায় খালি বালি আর বালি। পানি অস্বাভাবিক হারে কমে যাওয়ার কারণে নদ হারিয়ে ফেলেছে তার স্বাভাবিক স্রোতধারা। নদে স্রোতের প্রবাহ না থাকায় নৌকা চলাচল করতে গিয়ে ডুবোচরে আটকে যাচ্ছে। তখন নৌকার মাঝি মাল্লারা নদীতে নেমে ঠেলে নৌকা পার করছে। অনেক মানুষ নদী পাড় হচ্ছে পায়ে হেঁটে।
 
রাজীবপুর নৌকা ঘাট থেকে চিলমারী ও গাইবান্ধা নৌরুটে যাত্রীবাহী নৌকা চালায় সাইরুদ্দিন (৩০)। তিনি বলেন, ‘রাজীবপুর ঘাট থেকে চিলমারী যাইতে ২০ স্থানে নৌকা ঠেইকা ধরে। তহন ঠেলা দিয়া নৌকা পাড় করা নাগে।’
 
তিনি আরো জানান একই অবস্থা গাইবান্ধা যাইতেও। রৌমারী ঘাট থেকে কুড়িগ্রাম নৌকা পর্যন্ত যাত্রীবাহী নৌকা চালান আব্দুস সালাম। তিনি বলেন ‘এবা কইরা নৌকা চালান যাবো না। মেলা জায়গায় নৌকা ঠেইকা ধরে। মনে হয় দু’একদিন গেলে যাওয়া যাবো না।’
 
নৌকা ব্যবসায়ী তৈয়ব আলী জানান, এখন নির্দিষ্ট কোনো নৌকা ঘাট নেই। নদীতে পানি না থাকায় চর পড়েছে। ফলে বালি চর পায়ে হেঁটে নৌকায় উঠতে হয়। চিলমারী ভাসমান তেল ডিপোর ওপর নির্ভরশীল রৌমারী রাজীবপুর উপজেলা। নদী পথ বন্ধ হয়ে গেলে জ্বালানি সংকট দেখা দিবে। কারণ নদী পথেই জ্বালানি তেল আনা হয়।
 
নৌকা ব্যবসায়ী ও মাঝিরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নদী ড্রেজিং এর দাবি জানান। এই রুটে নিয়োমিত চলাচলকারী নজরুল ইসলাম জানান, নদীতে পানি কম থাকার কারণে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা যেতে আগের চেয়ে অনেক সময় বেশি লাগে। তিনি এই নদী পথ গুলোতে ড্রেজিং করার দাবি জানান।
 
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু তাহের জানান, ব্রহ্মপুত্র নদে ড্রেজিংয়ের একটি প্রস্তাব উর্ধ্বতন কর্র্তপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।
 
লেখাটি এর আগে এখানে প্রকাশিত: http://www.dhakatimes24.com/index.php?view=details&data=University&news_type_id=1&menu_id=1&news_id=24906
 
 
গণঅভ্যুত্থান দিবস কাল

 
বাঙালি জাতির স্বাধিকার আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মাইলফলক ঊনসত্তরের ঐতিহাসিক মহান গণ-অভ্যুত্থান দিবস আগামীকাল বৃহস্পতিবার।
 
মুক্তিকামী নিপীড়িত জনগণের পক্ষে জাতির মুক্তি সনদ খ্যাত ছয় দফা এবং পরবর্তীতে ছাত্র সমাজের দেয়া ১১ দফা কর্মসূচির প্রেক্ষাপটে সংঘটিত হয়েছিল এ গণঅভ্যুত্থান।
দিবসটি পালন উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
 
ঐতিহাসিক ২০ জানুয়ারি ৬৯’র গণ-অভ্যুত্থানের নায়ক শহীদ আসাদের আত্মদানের পর ২১, ২২, ২৩ জানুয়ারি শোক পালনের মধ্য দিয়ে ঢাকায় সর্বস্তরের মুক্তিপাগল জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ২৪ জানুয়ারি এই অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়। এই গণঅভ্যুত্থানের পথ বেয়ে রক্তাক্ত সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি মহান স্বাধীনতা অর্জন করে।
 
ঊনসত্তরের এদিন ঢাকায় সচিবালয়ের সামনের রাজপথে নবকুমার ইনস্টিটিউটের নবম শ্রেণীর ছাত্র কিশোর মতিউর ও রুস্তম শহীদ হন। প্রতিবাদে সংগ্রামী জনতা সেদিন সচিবালয়ের দেয়াল ভেঙে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিক্ষুব্ধ জনগণ আইয়ুব মোনায়েম চক্রের দালাল, মন্ত্রী, এমপিদের বাড়িতে এবং তাদের মুখপত্র হিসাবে পরিচিত তৎকালীন দৈনিক পাকিস্তান ও পাকিস্তান অবজারভারে আগুন লাগিয়ে দেয়। জনগণ আইয়ুব গেটের নাম পরিবর্তন করে আসাদ গেইট নামকরণ করে।
 
এ দিবস পালন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াও এ উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন।
 
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক তাৎপর্যপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা, পরবর্তীতে ১১ দফা ও ঊনসত্তরের গণাভুত্থানের পথ বেয়ে রক্তাক্ত সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা অর্জিত হয়।
 
তিনি বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে ঔপনিবেশিক পাকিস্তানি শাসন, শোষণ ও বঞ্চনা থেকে জাতিকে মুক্ত করতে ঐতিহাসিক ৬ দফা ঘোষণা করেন। এতে স্বাধিকার আন্দোলনের গতি তীব্রতর হয়। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে বঙ্গবন্ধুকে বন্দী করে। এ মামলার বিরুদ্ধে দেশব্যাপী ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক-জনতা দুর্বার ও স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন গড়ে তোলে।
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, পাকিস্তানি সামরিক শাসন উৎখাতের লক্ষ্যে ১৯৬৯ সালের এদিনে সংগ্রামী জনতা শাসকগোষ্ঠীর দমন-নিপীড়ন উপেক্ষা করে ও সান্ধ্যআইন ভঙ্গ করে মিছিল বের করে।
 
মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণে নবম শ্রেণীর ছাত্র মতিউর রহমান শহীদ হয়। এরপর জনতার রুদ্ররোষে এবং গণঅভ্যুত্থানের জোয়ারে স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রধান আসামী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ সকলকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। আইয়ুবের স্বৈরতন্ত্রের পতন ঘটে।
 
তিনি বলেন, অপশাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রামে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান আজও আমাদের অনুপ্রাণিত করে।
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শহীদ মতিউরসহ গণঅভ্যুত্থান দিবসের সকল শহীদের অবদানের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন। তিনি তাদের সকলের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
 
এ উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, ছাত্র, পেশাজীবী ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
 
কর্মসূচির অংশ হিসাবে শহীদ আসাদ পরিষদ ২৪ জানুয়ারি মহান গণ-অভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে সকালে শহীদ মতিউর স্মৃতিসৌধে (নবকুমার ইনস্টিটিউট, বকশীবাজার, ঢাকা) শ্রদ্ধাঞ্জলি এবং বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা মঞ্চে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
প্রাক্তন ছাত্রলীগ ফাউন্ডেশন সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। এতে সভাপতিত্ব করবেন ফাউন্ডেশনের আহবায়ক নূরে আলম সিদ্দিকী। আলোচক থাকবেন আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ এমপি।
 
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর বিকাল চারটায় দিবসটি স্মরণে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
 
এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
 
লেখাটি এর আগে এখানে প্রকাশিত
http://www.dhakatimes24.com/index.php?view=details&data=News&news_type_id=1&menu_id=1&news_id=24953